মরগ্যান হুসেল এর দ্য সাইকোলজি অফ মানি ‘wealth’ , ‘greed’ , ‘happiness’ এর ওপর লেখা একটি অসাধারণ বই যার প্রথম দশটি অধ্যায় নিয়ে আগের ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে শেষ দশ টি অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ সহজ ভাষায় তুলে ধরা হল।
১১) Reasonable>Rational:
‘Reasonable’ এবং ‘rational’ শব্দদুটো শুনতে একই রকম মনে হলেও এদের মধ্যে সূক্ষ পার্থক্য রয়েছে। ধরুন, আপনাকে ১০ ডলার দেওয়া হল এবং বলা হল এই টাকাটা আপনি নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন বা কারোর সাথে ভাগ করে নিতে পারেন। তখন আপনি কি করবেন? আপনি rational হলে টাকাটা নিজে কাছে রেখে দেবেন কারণ টাকাটা দিয়ে আপনি যাখুশি করতে পারেন, তাই নিজের কাছে রেখে দিলে আপনার লাভ। কিন্তু আপনি যদি reasonable হন তাহলে আপনার মনে হতে পারে টাকাটা পুরোটা আপনার কাছে না রেখে কারোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত। অর্থাৎ rational যুক্তিনির্ভর, অপরদিকে reasonable বলতে ন্যায়সঙ্গত হওয়াকে বোঝায়। একাডেমিক ফাইন্যান্সের বিনিয়োগ কৌশলগুলি থিয়োরি ও যুক্তিনির্ভর। কিন্তু বাস্তব জীবনে বিনিয়োগ করার সময় মানুষ যুক্তিভিত্তিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে না। তারা যাতে রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে সেইভাবেই নিজেদের ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও বানায়।
হ্যারি মারকুইজ রিস্ক এবং রিটার্নের মধ্যে গাণিতিক ভারসাম্য উদ্ঘাটন করার জন্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে যখন ব্যক্তিগতভাবে জিগ্যেস করা হয় তিনি তার টাকা কিভাবে ইনভেস্ট করেন তখন তিনি বলেন ভবিষ্যতের অনুশোচনা বা অনুতাপের হাত থেকে বাঁচতে তিনি সবসময় safe side এ থাকার চেষ্টা করেন। তাই তার শেয়ার বন্ডস এবং ইকুইটির মধ্যে সমানভাবে বিভাজিত রাখতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ মানুষ কোন স্প্রেডশিট নয় , তাই তার সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
১২) Surprise:
অতীতের ঘটনাবলীকে ভবিষ্যৎ অবস্থার সূচক হিসেবে ধরা মানে একটা ফাঁদের মধ্যে পড়া কারণ ভবিষ্যৎ মানেই নতুন নতুন আবিষ্কার, নতুন নতুন পরিবর্তন। ইনভেস্টমেন্টের স্ট্রাটেজি মত সদা পরিবর্তনশীল। ইতিহাসের কয়েকটি স্মরণীয় ঘটনা যেমন গ্রেট ডিপ্রেশন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ডট কম বাবল, ৯/১১ ইত্যাদি বিশ্বঅর্থনীতির নকশায় বদলে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হল আমরা এইসব ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিকে ভবিষ্যতে ইনভেস্টমেন্ট এর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় worst-case-scenario হিসেবে ভাবি অথচ এইসব ঘটনাবলীর যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারেনি এমন কিছু ঘটতে পারে।তাই স্টক মার্কেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে history একটি misleading guide হতে পারে। তাই forecast এর ওপর ১০০% নির্ভরশীল না থেকে যেকোন surprise এর জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
১৩) Room For Error:
আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আপনি যাতে চরম ক্ষতির মুখে না পড়েন সেইজন্য সবসময় কিছু পথ খোলা রাখা দরকার। লেখক এটাকেই রুম ফর এরর বলেছেন। এই ধারণাই বেনজামিন গ্রাহামের ভাষায় margin of safety নামে পরিচিত। নিখুঁতভাবে ভবিষ্যৎবাণী করা একেবারেই সম্ভব নয় কারণ সময়ের মত অর্থনীতিও সদা পরিবর্তনশীল। বিল গেটস এটা খুব ভালোভাবে বুঝেছিলেন। তিনি বলেন তিনি যখন মাইক্রোসফ্ট খোলেন তখন ব্যাঙ্কে এত পরিমান টাকা রেখেছিলেন যাতে কোম্পানি যদি একবছরের জন্যও কোন প্রফিট না করে তবু যেন কর্মচারীদের বেতনসহ সমস্ত লিয়াবিলিটিজ নিশ্চিন্তে বহন করতে পারেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানীরা এক অস্বাভাবিক সমস্যার মধ্যে পড়ে। দীর্ঘদিন অব্যবহারের ফলে জার্মান যুদ্ধ ট্যাঙ্কগুলো শহরের বাইরে ময়দানে রাখা ছিল। প্রয়োজনের সময় দেখা গেলো বেশিরভাগ ট্যাঙ্ক অকেজো হয়ে গেছে। ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখলে এক আশ্চর্য বিষয় সামনে আসে যা কারোর মাথাতেই ছিল না। মেঠো ইঁদুরেরা ট্যাঙ্কের ভেতর বাসা করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বাইরের আস্তরণ কেটে তাদের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছে। জার্মানরা পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত যন্ত্রপাতির অধিকারী ছিল কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তারা মেঠো ইঁদুরের কাছে এমনভাবে পরাস্ত হবে। সুতরাং সঞ্চয় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন কারণের প্রয়োজন নেই কারণ জীবন আপনাকে কখন কোন পরিস্থিতির সামনে এনে দাঁড় করাবে তা আপনার কল্পনাতীত।
১৪) You’ll Change:
একটি পাঁচ বছরের বাচ্চাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সে কি হতে চায় সে বলে সে ট্রাক ড্রাইভার হতে চায় কারণ তার চোখে ট্রাক ড্রাইভার হওয়াটা একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। বড় হয়ে সে হয়তো উকিল বা বিচারক হতে চায় কারণ তার মনে হয় এটা ট্রাক চালানোর থেকে অনেক বেশি সম্মানজনক কাজ। সে ভাবে এটাই তার একমাত্র স্বপ্ন। আইনজীবি হওয়ার পর তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা, সপ্তাহের পর সপ্তাহ এত কাজ করতে হয় যে সে পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে উঠতে পারে না। তাই সে এই চাকরির বদল অন্য কোন flexible job নেয়। কিন্তু তারপর সে দেখে বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য লোক রাখা এত বেশি খরচসাপেক্ষ যে সে stay-at-home parent হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভাবে এতদিনে সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর ৭০ বছর বয়সে সে অনুতাপ করে যে সারাজীবন stay-at- home parent থাকার ফলে সে retirement এর খরচ বহন করতে অক্ষম।
আমাদের জীবনও ওই একই গোলকধাঁধার মধ্যে আবর্তন করতে থাকে। জীবনের শৈশব থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত প্রতিটা স্তরে আমাদের ব্যক্তিত্বের আমূল পরিবর্তন ঘটে। আমাদের priority বদলে যায় , তাই আমাদের সিদ্ধান্তগুলোও পাল্টে যায়। আমরা না চাইলেও এই প্রক্রিয়া আমরণ চলতে থাকে। তাই নির্দিষ্ট কোন বিনিয়োগ পদ্ধতিতে নিজেকে টিকিয়ে রাখা এত কঠিন। এবং এই কঠিন কাজটা ধর্য্যের সাথে করতে পারাটাই একটা মস্ত বড় সাফল্য।
১৫) Nothing is free:
মানুষ গাড়ি, বাড়ি, খাবার ইত্যাদির দাম দিতে প্রস্তুত থাকে কিন্তু ভালো investment return পেতে হলে যে দাম দিতে হয় তা এড়িয়ে চলতে প্রানপন চেষ্টা করে। এখন প্রশ্ন হল বিনিয়োগের জন্য আপনাকে কি দাম দিতে হতে পারে? বিনিয়োগের জন্য যে দাম দিতে হয় তা হল market volatility অর্থাৎ বাজারগত ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ভয়, দ্বিধা এবং মানসিক দ্বন্দ্ব। কিন্তু এই মূল্য কোন price tag এর সাথে আসে না তাই আমরা বুঝতে ভুল করি। কোন খারাপ কাজ করলে যেমন fine দিতে হয় তেমনি বিনিয়োগ করার পর ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাকে fine বলে মনে হয়। তাই আমরা এমনভাবে বিনিয়োগ করতে চাই যাতে এই শাস্তি থেকে বাঁচা যায় এবং এটা করতে গিয়ে এমনসব কৌশল অবলম্বন করি যার ফলস্বরূপ আরো বেশি মূল্য চোকাতে হয়।
ধরুন আপনি একটি গাড়ি কিনতে চান যার মূল্য ৩০,০০০ ডলার। এক্ষেত্রে আপনার কাছে তিনটি উপায় আছে -১। ৩০,০০০ ডলার দিয়ে একটা নতুন গাড়ি কিনবেন, ২। কোন সস্তা second hand গাড়ি কিনবেন, ৩। চুরি করবেন। ৯৫% মানুষ তৃতীয় উপায়টি এড়িয়ে চলতে চাইবেন কারণ আপনি জানেন চুরি করার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। সফল বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনটি option থাকে। ১। আপনাকে মূল্য দিতে হবে অর্থাৎ মেনে নিয়ে চলতে হবে যে শেয়ার বাজারে ওঠা-নামা স্বাভাবিক ব্যাপার। ২। কম অনিশ্চয়তাযুক্ত কোন asset কিনতে হবে (ব্যবহৃত গাড়ি কেনার মত ) ৩। আপনাকে বড়সড় মুনাফা অর্জন করার জন্য চতুরতা এবং কৌশল অবলম্বন করতে হবে। অথচ মজার বিষয় হল, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষ গাড়ি চুরি করার মত এই তৃতীয় উপায়টাই বেছে নেয়। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দাম পড়ার আগেই শেয়ার বেচে দিতে চায় আবার দাম বাড়বে মনে হলে শেয়ার কিনতে শুরু করে, অথবা দিনের দিন বেচা-কেনা (day trading) শুরু করে। বড়লোক হওয়ার শর্টকাট খুঁজতে গিয়ে তারা অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
১৬) You & Me:
আমরা প্রত্যেকেই যেমন একে অপরের থেকে আলাদা, তেমন আমাদের চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশা ইত্যাদিও আলাদা। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তাই। কারোর পরিকল্পনা শর্ট-টার্ম, কারোর বা লং-টার্ম। যখন কোন নিউজ চ্যানেলে বলে আপনার এই (x /y /z ) শেয়ার টা কেনা উচিত তখন মনে রাখতে হবে তারা কিন্তু জানে না আপনি কে, আপনি কি একজন টিন এজার নাকি বয়স্ক নাকি বিধবা। তারা জানে না আপনার ফিনান্সিয়াল গোল কি, আপনার ঝুঁকি নেওয়ার মত বয়স বা মানসিক দৃঢ়তা আছে কিনা। কোন সাধারণ উপদেশে কান না দিয়ে আমাদের priority এবং preference কি তা বিবেচনা করা উচিত। তাই লেখক পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “Beware taking financial cues from people playing a different game than you are.”
১৭) The Seduction Of Pessimism:
স্টিফেন হকিংস ২০০৪ এ নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একবার ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। হকিংস দুরারোগ্য মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে ২১ বছর বয়সে পঙ্গু হন এবং বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার কম্পিউটারের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নিজের বই সম্পর্কে নিজের উত্তেজনা প্রকাশ করছিলেন। সাংবাদিক যখন তাকে প্রশ্ন করে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে সবসময় এত উৎফুল্ল থাকেন, তখন তিনি বলেন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর জীবন থেকে তার expectation শূন্য হয়ে গেছে। তাই তারপর থেকে প্রত্যেকটা দিনকে তিনি একটা surprise এর মত গ্রহণ করেন।
আশাবাদের বিপরীত হল pessimism যেখানে মানুষ বিশ্বাস করে জগৎসংসার সুখের বদলে দুঃখতে পূর্ণ। এটা মানুষের আশা আকাঙ্খাকে কমিয়ে দেয়। ফলে খারাপ কিছু ঘটলে কষ্ট যেমন কম হয় তেমন ভালো কিছু হলে তা ভীষণ আনন্দের হয়। এবং সেজন্যই মানুষ pessimistic হতে পছন্দ করে।
progress এর গতি ধীরপ্রকৃতির। কিন্তু ধ্বংস মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যেতে পারে। compound effect ধীরে ধীরে কাজ করে, তাই progress তেমনভাবে চোখে পড়ে না। কিন্তু একটি সামান্য ভুল বা ক্ষনিকের দুর্বলতা আপনার আর্থিক জীবনের সবকিছু উল্টোপাল্টা করে দিতে পারে। Wrights brothers যখন প্রথম এরোপ্লেনের সফল উড়ান সম্পন্ন করেছিল তখন সেটা মানুষের মনে তেমন কোন দাগ কাটেনি কিন্তু ১৯০৮ সালে যখন Thomas Selfridge নাম এক আর্মি লেফটেন্যান্ট demonstration flight এ মারা যায় তখন হঠাৎ করে Wrights brothers জনগণের মনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে দিলো। ক্রমাগত আর্থিক উন্নতি মানুষকে তেমনভাবে প্রভাবিত করে না কিন্তু শেয়ার বাজারে সামান্য ধ্বস নামলে তা মানুষকে সহজেই ভীতসন্ত্রস্ত এবং হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।
১৯৪০ সালের শেষের দিকে জাপান যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকোপে বিধ্বংস, যখন মানুষের কাছে খাওয়ার মত অন্নটুকু নেয় তখন যদি স্থানীয় সংবাদপত্রে এমন কোন লেখা বেরোত যে আশাহত হওয়ার কিছু নেয়, আমাদের জীবদ্দশায় জাপান এত বেশি উন্নতি করবে যে বিশ্ব অর্থনীতিতে উন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করবে জাপান। এখানকার অধিবাসীদের আয়ু দ্বিগুন হয়ে যাবে। এখানে বেকারত্ব বলে কোন জিনিসের অস্তিত্ব থাকবে না। জাপান এত বেশি ধনী দেশ হবে যে আমেরিকার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলির অধিকারী হবে। এমনকি আমেরিকা জাপানের অর্থনীতিকে অনুসরণ করবে। এখানকার স্টকমার্কেট এত বেশি রিটার্ন দেবে যা বিশ্বইতিহাসে কোন দেশ এর আগে দেয়নি। এইসব কথা শুনলে তৎকালীন জনমানুষ অট্টহাস্য করে উড়িয়ে দিত এবং পাগলের প্রলাপ বলে আখ্যা দিতো।
অথচ মজার বিষয় হল উপরে বর্ণিত সমস্তকিছুই যুদ্ধপরবর্তী জাপান প্রতক্ষ করেছে। কিন্তু সদর্থক কথা মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে। যদি কোন জ্ঞানী ব্যক্তি আপনাকে বলে এমন একটা স্টকের কথা যার মূল্য একবছরের মধ্যে দশগুন বৃদ্ধি পাবে তাহলে আপনি ভুরুকুচঁকে তাকে অবিশ্বাস করবেন কিন্তু যদি কোন মূর্খব্যক্তি এসে আপনাকে বলে আপনি যে স্টক টি কিনতে চলেছেন তা আপনাকে আপাদমস্তক ডোবাবে তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিশ্বাস করে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলবেন। কারণ খারাপ কোন ভবিষৎবাণী মানুষের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। মানুষের এই আবেগতাড়িত আচরণ হল মনস্তত্বগত ব্যাপার যা এড়িয়ে চলা কঠিন।
১৮) When you’ll believe anything:
দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন মানুষ যেকোন কিছুতে বিশ্বাস করতে শুরু করে। লন্ডনের গ্রেট প্লেগে ১৬৬৫-১৬৬৬ সাল পর্যন্ত ১৮ মাস সময়কালের মধ্যে প্রায় ১০০,০০০ জনের মৃত্যু ঘটে যার ফলে লন্ডনের প্রায় এক চতুর্থাংশ জনসংখ্যা কমে যায়। এতপরিমান মৃত্যুহার মানুষকে এতটা ভীত করে তুলেছিল যে জাদু, মন্ত্র-তন্ত্র যে যা উপদেশ দিয়েছে মানুষ তা অন্ধভাবে অনুসরণ করেছে। মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগে বহু ভুয়ো ডাক্তারি ক্লিনিক গজিয়ে উঠেছিল লন্ডনের আনাচে কানাচে চমকপ্রদ সব বিজ্ঞাপনের সাথে যেমন “infallible preventive pills against the plague’, “neverfailing preservatives against the infection” ইত্যাদি। জীবন যখন বাজি তখন বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষও ভিত্তিহীন কথা বিশ্বাস করতে শুরু করে।
ঠিক তেমন মানুষ জানে শেয়ার বাজার সম্পর্কে পূর্বাভাস বেশিরভাগ সময় সঠিক হয় না তবুও সেগুলো বিশ্বাস করতে চায়। এর কারণ সম্পর্কে মনবিজ্ঞানী ফিলিপ টেটলক লিখেছেন, “we need to believe we live in a predictable, controllable world, so we turn to authoritative-sounding people who promise tp satisty that need” আমরা সেই গল্পই বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যা আমরা মনে মনে সত্যি হতে দেখতে চাই। তাই শেয়ার বাজারের পূর্বাভাসের তেমন কোন বাস্তব গুরুত্ব ও নিশ্চয়তা না থাকলেও আমরা সেগুলিকে বিশ্বাস করতে ভালোবাসি।
১৯) All together Now: Believe anything:
অর্থ সম্পর্কিত মনস্তত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কে আমরা পূর্ব উল্লেখিত আঠারোটি অধ্যায়ে যাকিছু জানলাম, শিখলাম তার সারসংক্ষেপ এই অধ্যায়ে করা হয়েছে। এই শিক্ষণীয় বিষয়গুলি হল-
# Go out of your way to find humility when things are going right and forgiveness/compassion when things go wrong.
# Less ego, more wealth. Don’t showoff to feed your ego, build wealth.
#Manage your money in a way that helps you sleep at night.
# If you want to do better as an investor, the simple most powerful thing you can do is increase your time horizon.
# Become OK with a lot of things going wrong. You can be wrong half the time and still make a fortune.
# Use money to gain control over your time.
# Be nicer and less flashy as no one is impressed with your possessions as you are.
# Save. Just save. You don’t need a specific reason to save.
# Define the cost of success and be ready to pay it because nothing worthwhile is free.
# Worship room for error.
# Avoid the extreme ends of financial decisions as the more extreme your past decisions were the more you may regret them as you evolve.
# You should like risk because it pays off over time.
# Define the game you’re playing and make sure your actions are not being influenced by people playing a different game.
# Respect the mess. Smart, informed and reasonable people can disagree in finance because people have vastly different goals and desires. There is no single right answer, just the answer that works for you.
২০) Confessions:
শেষ অধ্যায়ে লেখক তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন। লেখকের কাছে অর্থের মূল্য কি তা তিনি জানিয়েছেন এবং সঙ্গে এও বলেছেন যে প্রত্যেককে নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। লেখক অর্থকে সবসময় স্বাধীনতার চাবিকাঠি হিসেবে দেখে এসেছেন। তাই বিবাহের পর থেকেই একটি মাঝারি মাপের জীবনযাত্রা বেছে নিয়েছেন যাতে করে বেশি পরিমান টাকা সঞ্চয় করতে পারেন। বিলাসিতা থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখে একটি স্বাছন্দময় জীবন বেছে নিয়েছেন যাতে সারাজীবন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেন। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা যা উপদেশ দেন তার থেকে তিনি অনেক বেশি টাকা (সম্পদের প্রায় ২০%) ক্যাশ হিসেবে রাখেন যাতে করে কোন অবস্থাতেই তাকে স্টক থেকে টাকা তুলতে না হয়।প্রথমজীবনে তিনি stock picker হিসেবে তার কেরিয়ার শুরু করলেও বর্তমানে তিনি কম ঝুঁকিপূর্ণ ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করতে বেশি পছন্দ করেন। লেখকের বিনিয়োগ কৌশল “high savings rate”, “patience” এবং “optimism” এই তিনটি বিষয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বিনিয়োগ কৌশল পূর্বে যেমন পরিবর্তন করেছেন তেমনি আগামী দিনেও তা পরিবর্তিত হবার সম্ভবনা আছে বলে তিনি মনে করেন।
The psychology of money Bengali version paya jabe ki??