মানি ম্যানেজমেন্টের ওপর খুব সম্প্রতি লেখা একটি অসাধারণ বই দ্য সাইকোলজি অফ মানি। বইটির রচয়িতা মর্গ্যান হুসেল, বর্তমান বয়স ৩৬ বছর। বইটি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর।
ভূমিকাতেই লেখক দুজন সফল ব্যক্তিত্বের কথা বলেছেন। একজন হলেন রোনাল্ড জেমস রিড এবং অন্যজন হলেন রিচার্ড ফুসকন। রোনাল্ড রিড তার জীবদ্দশায় প্রথমে দ্বাররক্ষকের কাজ এবং পরে গ্যাস স্টেশনে ঝাড়ুদারের কাজ করেছেন। তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। ৩৮ বছর বয়সে তিনি বারো হাজার ডলার দিয়ে একটি সাদামাটা বাড়ি কেনেন এবং বাকি জীবনটা সেখানেই কাটান। ২০১৪ সালে তার মৃত্যুর পর জানা যায় তার মোট সম্পত্তি আট মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ষাট হাজার কোটি টাকা। তিনি উইল করে দুই মিলিয়ন ডলার তার নাতি-নাতনিদের জন্য রেখে যান এবং বাকি ছয় মিলিয়ন ডলার স্থানীয় হাসপাতাল এবং লাইব্রেরিকে দেন করে যান। এখন সকলের মনে প্রশ্ন একজন সাধারণ গ্যাস স্টেশনের কর্মচারী কিভাবে এত পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হলেন? এর মধ্যে কোন গোপন রহস্য নেয়। পুরোটাই হল কম্পাউন্ডিং এর অবিশ্বাস্য শক্তি। রিডের উপার্জন স্বল্প হলেও তিনি যতটুকু পেরেছেন সঞ্চয় করে গেছেন এবং স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে গেছেন। এবং কম্পাউন্ডিং এর জোরে সেই অর্থ এত বিপুল পরিমান অঙ্কে পরিণত হয়েছে।
এবার আসি রিচার্ড ফুসকনের কথায়। রিডের মৃত্যুর কয়েকমাস আগে ফুসকনের কথা চর্চায় আসে। ইনি হার্ভার্ড থেকে এমবিএ করে Merrill Lynch এ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে এত পরিমান অর্থ সঞ্চয় করেন যে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০০ সালে ফুসকন বিপুল পরিমান অর্থ লোন করেন তার গ্রিনউইচের ম্যানসনকে আরো প্রসারিত করতে। এই ম্যানসনে এগারোটা বাথরুম, দুটি এলেভেটর, দুটি সুইমিং পুল এবং সাত টি গ্যারেজ আছে যার মেইনটেন্যান্স খরচ মাসে প্রায় নব্বই হাজার ডলার। কিন্তু এই প্রাসাদের গৌরব শেষ হয়ে যায় ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার সময়। ২০০৮ এর অর্থনৈতিক মন্দা ফুসকনকে সম্পূর্ণরূপে ধূলিস্যাৎ করে দেয়। বাজারে এত পরিমান ধার এবং illiquid অ্যাসেট তাকে দেউলিয়া করে দেয়। ২০১৪ সালে তার এই গ্রিনউইচ ম্যানসন নিলামে ওঠে।
এই দুজন সমসাময়িক মানুষের গল্পের মাধ্যমে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন কোটিপতি হওয়া এবং শেষপর্যন্ত কোটিপতি থাকার মধ্যে যে ব্যবধান তার জন্য অনেকটাই দায়ী হল ব্যক্তিগত আচরণ।এখানে রিড ছিলেন ধৈর্যশীল এবং মিতব্যয়ী, অন্যদিকে ফুসকন ছিলেন লোভী এবং অসংযমী।রিড ফুসকনের মত শিক্ষিত না হলেও অর্থনৈতিক ব্যাপারে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। লেখক মনে করেন অর্থনৈতিক সাফল্য কোন যুক্তিভিত্তিক বিজ্ঞান নয় বরং একটি শিল্পকলা যা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন। কোন ব্রিজের ওপর কত পরিমান ফোর্স প্রয়োগ করলে তা ভেঙে যাবে সেটা একজন ইন্জিনিয়ার হিসাবনিকাশ করে বের করতে পারবেন কিন্তু ফাইন্যান্সটা যুক্তিনির্ভর নয়। এটা মানুষের আচরণের দ্বারা প্রভাবিত, তাই এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন নিয়মকানুন খাটে না।
লেখক বইটিকে কুড়িটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। এখানে প্রতিটি অধ্যায়ের শিরোনাম অপরিবর্তিত রেখে বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হল।
১) No one’s crazy:
আমেরিকান ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ এর অর্থনীতিবিদ Ulrike Malmendier এবং Stefen Nagel ২০০৬ সালে কনসিউমার ফাইন্যান্সের ৫০ বছরের তথ্য সংগ্রহ করে একটি পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখেছেন আমেরিকানরা তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কি করেন। এটা করতে গিয়ে তারা অবাক হয়ে যান যে বেশির ভাগ মানুষ টাকাপয়সার ব্যাপারে থিয়োরির ওপর ভিত্তি না করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা বলেছেন, ” Our findings suggest that individual investor’s willingness to bear risk depends on personal history”,
উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ অর্থনৈতিক মন্দার সময় বেড়ে ওঠে তাহলে সে বন্ডে কম ইনভেস্ট করবে, আবার যদি কেউ স্টক মার্কেটের অগ্রগতির সময় বেড়ে ওঠে সে তার টাকার বেশিরভাগ অংশ স্টকে ইনভেস্ট করবে।
আমাদের প্রত্যেকটা আর্থিক সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে সেই মুহূর্তে ঠিক মনে হয় যদিও অন্যের কাছে উন্মাদের আচরণ বলে মনে হতে পারে। এর সবথেকে বড় উদাহরণ হল লটারির টিকিট।আমেরিকার নিম্নবিত্ত মানুষেরা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪১২ ডলারের লটারির টিকিট কাটে। অথচ এইসব মানুষেরাই এমার্জেন্সির সময় ৪০০ ডলার বের করতে অসমর্থ। মিলিয়নের মধ্যে হয়তো একজন সেই লটারি জেতার সুযোগ পাবে কিন্তু তাদের প্রত্যেকে এই আশা রাখে যে সে এই সুযোগটা পেলে তার দারিদ্রতা ঘুচে যাবে। তাদের এই মানসিকতার পেছনে যে অনুভূতি কাজ করছে তা কোন স্বচ্ছ এবং সফল ব্যক্তির পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। লেখক এইধরণের আচরণকে সমর্থন করছেন ভাবলে ভুল হবে। তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন সামনের মানুষটা কোন অভিজ্ঞতা এবং কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে কোন বড়সড় আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয় তা আমার নাও জানা থাকতে পারে, সেইজন্য তাকে বোকা বা উন্মাদ ভাবা ঠিক নয়।
২) Luck and Risk:
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর স্কট গালোঁয়ে একটি দারুন কথা বলেছেন “Nothing is as good or as bad as it seems” নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর স্কট গালোঁয়ে একটি দারুন কথা বলেছেন অর্থাৎ নিজের সাফল্য বা ব্যর্থতা এবং অন্যের সাফল্য বা ব্যর্থতাকে তুল্যমূল্য বিচার করার সময় আমাদেরকে মনে রাখতে হবে বাইরে থেকে দেখে যতটা ভালো বা যতটা খারাপ মনে হচ্ছে আসলে বাস্তবে ততটা নাও হতে পারে। এই প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন ভাগ্য(luck) এবং ঝুঁকি(risk) এরা হল দুই ভাই। বিল গেট্স কিভাবে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সেকথা বলতে গিয়ে লেখক ভাগ্যের কয়টা উল্লেখ করেছেন। বিল গেট্স এবং মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা এলেন পল যখন লেকসাইড স্কুলে পড়ছিলেন তখন লেক সাইড স্কুল ছিল আমেরিকার একমাত্র স্কুল যেখানে কম্পিউটার ছিল। কম্পিউটার বিষয়টি জেনারেল কারিকুলামে না থাকায় তারা দুজনে স্কুলের পর কিংবা ছুটির দিনে স্কুলের কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকত এবং খুব শীঘ্রই কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। এখন ভেবে দেখার বিষয় ১৯৬৮ সালে গোটা বিশ্বে প্রায় ৩০৩ মিলিয়ন ছাত্র তাদের বয়সী ছিল। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র ৩০০ ছাত্রই লেক সাইড স্কুলে পড়াশোনা করতো। সুতরাং বিল গেট্স ছিলেন মিলিয়নের মধ্যে একজন যার কম্পিউটার শেখার সুযোগ হয়েছিল। বিল গেট্স নিজেই একবার বলেছেন , “If there had been no Lakeside, there would have been no microsoft”
এবার আসি বিল গেট্সের এক বন্ধু এবং সহপাঠী কেন্ট এভান্স এর কথায়। গেট্সের মতে কেন্ট এভান্স ছিল ক্লাসের সেরা ছাত্র এবং কম্পিউটারে সমান পারদর্শী।ভাগ্যের অনুগ্রহ বিল গেট্স পেলেও কেন্ট ইভান্স পাননি। হাইস্কুল শেষ করার আগেই একটি মাউন্টেনিয়ারিং এক্সিডেন্টে এভান্স মারা যান। প্রত্যেকবছর আমেরিকাতে তিন ডজন মানুষ মাউন্টেনিয়ারিং এক্সিডেন্ট হয়। তারমধ্যে একজন হাইস্কুলারের মৃত্যুর চান্স মিলিয়নের মধ্যে একজনের। আর দুর্ভাগ্যবসত সেই একজন ছিলেন ইভান্স। হয়ত বেঁচে থাকলে তিনি মাইক্রোসফ্টের সহ প্রতিষ্ঠাতা হতেন কিন্তু ঝুঁকি তাকে সেই সুযোগ দিলো না।
ভাগ্য এবং ঝুঁকি সবসময় সহাবস্থান করবে। এবং এই বাস্তব সত্যকে মেনে নিয়েই আমাদেরকে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যেতে হবে। ধরা যাক, আপনি একটি স্টক কিনলেন যা পাঁচ বছর ধরে একটি জায়গায় আটকে থাকল অর্থাৎ কোন গ্রোথ হল না। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় হতে পারে, প্রথমত হতে পারে উক্ত স্টকটি কেনা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত। অথবা এমন হতে পারে এই স্টকটার গ্রো করার চান্স ৮০% ছিল কিন্তু আপনি সেই হতভাগ্য ২০% এর মধ্যে পড়লেন।
৩) Never Enough:
আমার যা আছে তা যথেষ্ট নয়, আরো চায় এই মানসিকতা বহু কোটিপতিকে দেউলিয়া করেছে। তাই লেখকের মতে উচ্চাশা থাকা ভালো কিন্তু লোভ যত অসন্তোষের কারণ। তিনি কলকাতার রজত গুপ্তর উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়েছেন। রজত গুপ্ত অল্প বয়সেই অনাথ হন। কিন্তু নিজের দমে তিনি প্রতিষ্ঠিত হন এবং মাত্র চল্লিশ বছর বয়সেই পৃথিবীর সবথেকে সম্মানীয় কনসাল্টিং ফার্ম Mckinsey তে CEO পদে অধিষ্ঠান করেন। ২০০৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং ইউনাইটেড স্টেটস ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাথে যুক্ত হয়ে যে জনহিতৈষীমূলক কাজ শুরু করেন। এমনকি পাঁচটি বিখ্যাত পাবলিক কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টর হিসেবেও নির্বাচিত হন। কলকাতার বস্তি থেকে উঠে আসা একজন যুবকের মোট সম্পত্তি দাঁড়ায় ১০০ মিলিয়ন ডলার(২০০৮ এর হিসাবে) তিনি তার অর্থ দিয়ে যা খুশি তাই করতে পারতেন কিন্তু তার কাছে এটা যথেষ্ট ছিল না। তিনি বিলেনিয়ার হতে চেয়েছিলেন। এবং এইজন্য তিনি অসৎ উপায় অবলম্বন করেন।
২০০৮ সালে Goldman Sach কোম্পানি আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে। ওয়ারেন বাফেট এই ক্ষতিতে কোম্পানিকে সাহায্য করতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করার পরিকল্পনা করেন। বোর্ড অফ ডিরেক্টর হিসেবে রজত গুপ্ত এই পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন এবং বুঝতে পারেন যে ওয়ারেন বাফেটের সাহায্যের ফলে কোম্পানির স্টক আবার তর তর করে বেড়ে যাবে। এই খবর জানার ১৬ সেকেন্ডের মধ্যে তিনি একজন হেজ ফান্ড ম্যানেজার রাজ রাজারাত্নামকে ফোন করে ব্যাপারটা জানান। রাজারাত্নাম সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির ১৭৫,০০০ টা শেয়ার কিনে নেন। বাফেট এবং গোল্ড ম্যান সাচ এর ডিলের কথাজনসমক্ষে আসতেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায় এবং রাজারাত্নাম রাতারাতি এক মিলিয়ন ডলার মুনাফা করে ফেলেন। ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের জন্য গুপ্ত এবং রাজারাত্নাম দুজনেই জেলে যান। ফলস্বরূপ তাদের কেরিয়ার এবং সম্মান দুটোই ধূলিসাৎ হলে যায়।
এখন প্রশ্ন হল গুপ্তর মত এত ধনী এবং সামাজিক প্রতিপত্তিশীল মানুষ কেন বিলেনিয়ার হওয়ার জন্য এত মরিয়া হয়ে উঠলেন। প্রথম কারণ হতে পারে সামাজিক তুলনা। অন্যের রোজকারের সাথে নিজের রোজগারের তুলনা করে আমরা বিচার করি আমাদের কম আছে না বেশি। এই ধরণের তুলনা যেমন সামাজিক চাপ তৈরী করে, তেমনি মানসিক সন্তুষ্টি থেকে বিরত রাখে। কম রোজগার করেও অনেক মানুষ নিজের চাহিদাগুলোকে মিটিয়ে খুশি থাকতে পারেন, আবার এমন অনেক অতৃপ্ত কোটিপতি আছে যাদের কাছে ‘Enough’ কখনোই হয়না।
রজত গুপ্ত জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যে অর্থ তার সম্মানকে শেষ করে দিতে পারে তার প্রতি এতটা আসক্তি আজ মূল্যহীন মনে হচ্ছে। ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, “There is no reason to risk what you have and need for what you don’t have and don’t need”. সম্মান অমূল্য, স্বাধীনতা অমূল্য, বন্ধু ও পরিবার অমূল্য। অর্থের বিনিময়ে এগুলো পাওয়া যেমন সম্ভব নয় , তেমনি অর্থের জন্য এগুলোকে বাজি রাখাও ঠিক না। বেশি অর্থের লোভে এমন কোন ঝুঁকি নেবেন না যা আপনার এই ছোট ছোট সুখ ও আনন্দকে কেড়ে নিতে পারে।
৪) Confounding compounding:
মর্গান হুসেল যখন বইটি লেখেন তখন ওয়ারেন বাফেটের নেট সম্পত্তি ছিল ৮৪.৫ বিলিয়ন ডলার (বর্তমানে ১০০.৬ বিলিয়ন) অথচ আপনি জানলে অবাক হবেন, এর মধ্যে ৮১.৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে তার ৬০ বছর বয়সের পর। বাফেট প্রথম বিনিয়োগ করেন দশ বছর বয়সে। তার বয়স ত্রিশ বছর হতে হতে তার সম্পত্তির পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক মিলিয়ন। এবার তিনি যদি অবসর নেওয়ার পর ভাবতেন আর ইনভেস্ট করবেন না বরং সঞ্চিত অর্থ নিয়ে অবসর জীবন কাটাবেন তাহলে আজ তার সম্পত্তি কত হত জানেন? মাত্র ১১ মিলিয়ন যা তার বর্তমান সম্পত্তির ৯৯.৯% এরও কম। ইনভেস্টিং এ তার দক্ষতার আছে ঠিকই কিন্তু তার এই অভূতপূর্ব সাফল্যের গোপন রহস্য হল সময়। এভাবেই কম্পাউন্ডিং কাজ করে। অনেক মানুষই কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টের কথা শুনে থাকবেন কিন্তু এটা এতটাই অবাস্তব বলে মনে হয় সকলে এটা নিজের জীবনে আশা করতে পারে না। এখন যদি কাওকে যোগ করতে বলা হয় ৮+৮+৮+৮+৮+৮+৮+৮+৮ তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে বলে দিতে পারবে (৭২) কিন্তু যদি বলা হয় ৮x৮x৮x৮x ৮x ৮x৮x৮x৮ এটা হিসাব করতে, তাহলে তার মাথা কাজ করবে না (১৩৪,২১৭,৭২৮) সুতরাং ভালো ইনভেস্টমেন্ট মানেই যে অত্যধিক ভালো রিটার্ন পাওয়া তা কিন্তু নয় , মাঝারি মাপের রিটার্ন যদি দীর্ঘকাল ধরে স্থিতিশীল থাকে তাহলে কম্পাউন্ডিং অবিশ্বাস্য ভাবে কাজ করবে।
৫) Getting wealthy vs Staying wealthy:
টাকা অর্জন করা এবং টাকা ধরে রাখা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশল। ইনকাম বাড়াতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয় এবং আশাবাদী থাকতে হয় কিন্তু টাকা ধরে রাখতে গেলে ঝুঁকি নয় , দরকার ভয় এবং নম্রতার। যা আজ আমার আছে তা যেকোন সময় বিধাতা কেড়ে নিতে পারে এই ভয়ভীতিটুকু থাকলে আপনি সংযম এবং মিতব্যয়ীতা অভ্যাস করতে পারবেন।
বিনিয়োগ করার জন্য বিশেষ কোন মেধা বা অন্তৰ্দৃষ্টির প্রয়োজন নেয়। হাল না ছেড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য লেগে থাকলে লগ্নিকৃত অর্থ বৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে। বিনিয়োগের সঙ্গে ‘survival mentality’ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে লেখক ‘survival’ কথাটির ওপর জোর দিয়েছেন।অনেকসময় শেয়ার মার্কেট এত নিচে নামতে থাকে যে অনেকে প্যানিক করে এবং টাকা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আবার হঠাৎ করে মাঝে মাঝে এত বেশি রিটার্ন পাওয়া যায় যে মানুষের মধ্যে টাকা তুলে নেওয়ার প্রলোভন তৈরী হয়। উভয় ক্ষেত্রেই সংযত থাকতে হবে এবং কম্পাউন্ডিং এর অবিশ্বাস্য শক্তিতে আস্থা রাখতে হবে। কম্পাউন্ডিং অনেকটা ওক গাছ লাগানোর মত। একবছর পর গাছটার তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। দশ বছর পর অনেকটাই পরিবর্তন চোখে পড়বে। পঞ্চাশ বছর পর গাছটি একটি অতিকায় বৃক্ষে পরিণত হবে। ওয়ারেন বাফেট তার জীবদ্দশায় চোদ্দো বার আর্থিক মন্দার শিকার হয়েছেন অথচ ভীত হয়ে তার শেয়ার বিক্রি করে দেননি। ওয়ারেন বাফেট এবং চার্লি মংগার যখন বিনিয়োগ করছিলেন তখন তাদের দলে আর একজন ছিলেন। তিনি হলেন রিক গুরিন। ১৯৭৩-৭৪ সালে যখন অর্থনৈতিক মন্দ চলছিল তখন শেয়ার মার্কেট ৭০% নিচে চলে যায়। বাজারে বিপুল পরিমান মার্জিন লোন থাকার কারণে রিককে বাধ্য হয়ে তার বার্কশায়ার স্টক বিক্রি করে ফেলতে হয়। ওয়ারেন, চার্লি এবং রিক তিনজনেরই ধনী হওয়ার দক্ষতা ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধনী থাকার বাড়তি দক্ষতাটুকু রিকের ছিল না যে দক্ষতাটা থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকের মতে আপনার কাছে এত পরিমান টাকা ব্যাক আপ হিসেবে সবসময় থাকা দরকার যাতে করে যেকোন এমার্জেন্সির সময় আপনাকে স্টক মার্কেট থেকে টাকা তুলতে না হয়। এটাকেই লেখক room for error বলে আখ্যা দিয়েছেন।আমরা একটা স্প্রেডশীট ফিনান্সিয়াল প্ল্যান করি কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের প্লানের সাথে বিধাতার প্লানের মিল নাও থাকতে পারে। এর জ্বলন্ত উদাহরণ হল কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক। কেও plan হিসেবে কিছু পরিমান টাকা সবসময় ঝুঁকিশূন্য খাতে রাখা প্রয়োজন। কোবিড এমার্জেন্সির সময় যারা শেয়ারমার্কেটের টাকা তুলে নিয়েছেন তাদের দুইদিক থেকে ক্ষতি। প্রথমত, বাজার মন্দা থাকায় যথাযথ টাকা পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, প্যানডেমিকের পর স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী হলে টাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ার যে সুযোগ ছিল তা নষ্ট হয়ে যায়। ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন পেতে পারেন এরকম দুতিনটে ফান্ডে ইনভেস্ট করুন কিন্তু অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের সর্বস্ব ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ পতনের কারণ, ” Planning is important but the most important part of every plan is to plan on the plan not going according to plan”
৬) Tails, you win:
ওয়াল্ট ডিজনি একজন সফল কার্টুন নির্মাতা একথা সকলেই জানে কিন্তু সাফল্য কি প্রথম থেকেই ছিল? তার প্রথম ষ্টুডিও দেউলিয়া হয়ে যায়। ১৯৩০ এর দশকে তিনি ৪০০ টারও বেশি কার্টুন তৈরী করেন। এর বেশির ভাগই ছোট প্রকৃতির ছিল এবং দর্শকদের ভালো লাগছিলো। কিন্তু এই কার্টুন তৈরী করা লাভের তুলনায় এত বেশি খরচসাপেক্ষ ছিল যে ওয়াল্ট ডিজনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। এরপর ১৯৩৮ এ তিনি তৈরী করেন Snow white and the seven dwarf যা কার্টুন দুনিয়ার ম্যাপটাই বদলে দিলো। মাত্র ছমাসেই এই ছবিটি ৮ মিলিয়ন ডলার ইনকাম করে যা আগের তৈরী ৪০০ টা কার্টুনের সম্মিলিত ইনকামের থেকে কয়েক হাজার গুন বেশি। ডিজনি ষ্টুডিও আবার নতুন করে তৈরী হলো, সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে কোম্পানি বারব্যান্ডে একটি স্টেট-অফ-দ্য-আর্ট ষ্টুডিও কেনে যা আজও বর্তমান। একটি ছবির জন্য পাওয়া অস্কার ডিজনিকে রাতারাতি ষ্টার করে দিলো। তিনি সারাজীবনে হয়ত হাজার হাজার ঘন্টা সিনেমা তৈরী করেছেন কিন্তু snow white এর ৮৩ মিনিট ছিল সেই tail event যা তাকে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছিলো।
Venture capital ও হল একটি tail driven ইন্ডাস্ট্রি। ধরা যাক, একটি ভেনচার ক্যাপিটাল ফার্ম ৫০ টা স্টার্ট-আপ কোম্পানিকে ঋণ দেবে। এদের মধ্যে মনে করা হয় অর্ধেক কোম্পানি ডুবে যাবে, ১০ টা ভালো করবে, একটি কি দুটো এত বেশি সাফল্য পাবে যে ভেনচার ক্যাপিটাল ফার্মের সমস্ত টাকা উঠে যাবে। Corerelation firm নামক একটি ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ২০০৪-১৪ সাল পর্যন্ত ২১,০০০ স্টার্ট-আপ কে ফাইন্যান্স করেছিল। এর মধ্যে ৬৫% স্টার্ট-আপ অসফল হয়। আড়াই শতাংশ বিনিয়োগ ১০-২০% রিটার্ন দেয়। এক শতাংশ ইনভেস্টমেন্ট ২০% এর থেকেও বেশি রিটার্ন দেয়। মাত্র ১/২ শতাংশ অর্থাৎ ২১০০০ কোম্পানির মধ্যে ১০০ তা কোম্পানি ৫০% এরও বেশি রিটার্ন দেয়। অর্থাৎ corerelation ফার্ম এর অধিকাংশ লাভ এই ১/২ % থেকে আসে।
২০১৮ সালে আমাজন কোম্পানি ‘S&P 500’ ইনডেক্স ফান্ড থেকে মাত্র ৬% রিটার্ন পেয়েছে। আমাজন fire phone থেকে শুরু করে ট্রাভেল এজেন্সির মতো হাজারো পরিষেবা দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছে কিন্তু আমাজন প্রাইম এবং আমাজন ওয়েব সার্ভিস লঞ্চ করার পর কোম্পানি যে সাফল্য পেয়েছে তা আগে কখনো হয়নি। এই দুটি tail event আমাজনের sales হাজার গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং ইনভেস্টমেন্ট ডিসিশন সবসময় যে নির্ভুল হতে হবে তার কোন মানে নেয়। অর্ধেক সময় আপনি ভুল করতে পারেন, অর্ধেক সময় পরিস্থিতি আপনার প্রতিকূলে থাকতে পারে কিন্তু সামান্য কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকে ধনী করতে পারে।
৭) Freedom:
লেখক মনে করেন সবথেকে বড় দৌলত হল প্রতিদিন সকালে উঠে যদি আপনি নিজেকে বলতে পারেন, “I can do whatever I want today” মিচিগান ইউনিভার্সিটির মনবিজ্ঞানী Augus Campbell একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখতে চেয়েছেন মানুষ কেন খুশি থাকে বা অখুশি থাকে। তিনি তার বই The Sense of wellbeing in America(১৯৮১) তে লেখেন নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি মানুষকে ভালো থাকতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আপনি যখন যা করতে চান তা করার অবকাশ বা ক্ষমতা যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি অনেক বেশি খুশি থাকতে পারেন। সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার এই খুশি বড় বাড়ি, বড় গাড়ি, দামি আসবাব, বেশি মাইনে ইত্যাদি সবকিছুর উর্দ্ধে। তবে মজার কথা হল সময়কে টাকা দিয়ে কেনা যেতে পারে। ব্যাপারটা একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক। ধরুন, আপনি একটি কোম্পানিতে কাজ করেন যেখানে বস অত্যাচারী এবং আপনার পোষাচ্ছে না। কিন্তু কোন উপায় না থাকায় আপনাকে বাধ্য হয়ে সেই চাকরিটি করে যেতে হচ্ছে। অথচ যদি আপনার ছমাস বা একবছরের সংসার চালানোর মত যথেষ্ট টাকা থাকতো তাহলে আপনাকে বসের ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হট না কারণ আপনি জানেন এই চাকরি চলে গেলেও আপনার এমন কিছু ক্ষতি হয়ে যাবে না। যথেষ্ট সঞ্চয় থাকায় নতুন চাকরি খোঁজার জন্য আপনি একবছর সময় পাবেন।
ধনী হওয়া এবং সুখী হওয়া একজিনিস নয়। আমেরিকা বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে ধণী দেশ অথচ ৫৫% আমেরিকান মনে করেন তাদের গতকাল আশঙ্কা ও উদ্বিগ্নে কেটেছে। ঘটনাটা হচ্ছে আমাদের ইনকাম বাড়ার সাথে সাথে আমাদের লাইফস্টাইল বদলায় কিন্তু সময়কে কেনার কৌশল আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি, তাই সময়ের যাঁতাকলে পিষে যাচ্ছি। লেখক মনে করেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এমন ভাবে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করুন যাতে পরিবারের সাথে একটা ছুটি কাটানো বা অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি হয়ে থাকা ইত্যাদি কোন ক্ষেত্রেই আর্থিক উদ্বেগ আপনাকে শঙ্কিত না করতে পারে। অমানসিক পরিশ্রম করে যে অর্থ রোজগার করলেন তা যদি জীবনটাকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে কাজে না আসে তাহলে এটাও একধরণের ব্যর্থতা।
৮) Man in the car paradox:
মানুষ কখনো কখনো তার চারপাশের মানুষকে প্রভাবিত করতে দামি গাড়ি বা কোন দামি জিনিস কেনে। সে ভাবে এতে তাকে লোকে সম্মান করবে কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। কেউ আপনাকে এইজন্য লক্ষ্য করে না যে আপনি কত বড়োলোক বা আপনার কত আছে। তারা ওই জিনিসগুলোর ওপর আকৃষ্ট হয় এবং ভাবতে শুরু করে ওই জিনিসগুলো যদি তাদের থাকতো! কেউ একটি ফারারি চেপে ঘুরে বেড়ালে আমরা মোটেও সেই ব্যক্তিটি কত বড়োলোক সেবিষয়ে কেয়ার করি না, বরং আমরা নিজেদেরকে ওই ব্যক্তিটির আসনে বসানোর স্বপ্ন দেখি। তাই কারো কাছ থেকে যদি সম্মান ও প্রশংসা পাওয়া আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে পার্থিব জিনিস কেনা কাটা করে তা পূরণ করার চেষ্টা করবেন না। নিজের প্রয়োজনে জিনিস কিনুন, কাউকে দেখানোর জন্য নয়। আপনার বড় বাড়ি, বড় গাড়ি, দামি গয়না, দামি জামাকাপড় ইত্যাদির বদলে আপনার নম্রতা, ভদ্রতা, সহৃদয়তা এবং সহানুভূতি ইত্যাদি মানসিক সূক্ষ প্রবৃত্তিগুলি আপনাকে অনেক বেশি সম্মানীয় ব্যক্তি করে তুলবে।
৯) Wealth is what you don’t see:
আমরা আমাদের চোখে সামনে যা দেখি সেই তথ্যটুকু দিয়ে অন্যদের সম্পত্তি বিচার করি। আমরা তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট বা ব্রোকারেজ স্টেটমেন্ট দেখতে পাইনা। তাই কারো সাফল্য মাপতে আমরা বাহ্যিক বিষয়গুলির ওপর নির্ভরশীল থাকি যেমন বড় গাড়ি, বড় বাড়ি, ইনস্টাগ্রাম ফটো ইত্যাদি। কিন্তু আসল সম্পত্তি হল সেটাই যেটা আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা। নিজেকে ধনী দেখানোর জন্য কেউ EMI দিয়ে একটি ১০০,০০০ ডলার দিয়ে গাড়ি কিনতেই পারে কিন্তু এতে তার সম্পত্তি থেকে ১০০,০০০ ডলার কমে গেলো, তাই নয় কি?
ডায়েট এবং এক্সারসাইজ ও একইভাবে কাজ করে। আপনি এক্সারসাইজ করে আপনার ওজন কমিয়ে ফেললেন। তারপর ভাবলেন অনেক পরিশ্রম করেছেন এবার একটু treat আপনার প্রাপ্য। এবং treat হিসেবে চকোলেট,পেস্ট্রি ইত্যাদি খেতে শুরু করলেন। তাহলে কি ওজন আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে না? একদিকে ক্যালোরি কমাচ্ছেন, অন্যদিকে জাঙ্ক খেয়ে ক্যালোরি বাড়াচ্ছেন, ফলে আপনার পরিশ্রম cancel out হয়ে যাচ্ছে। তাই সংযম অভ্যাস প্রয়োজন।
একই ভাবে আপনি যদি উপার্জন করেন এবং সংযম অভ্যাস না করেন তাহলে হয়তো নিজেকে বড়োলোক অনুভব করতে পারবেন, কিন্তু আদতে বড়লোক থাকতে পারবেন না। কারণ আসল সম্পত্তি সবসময় প্রচ্ছন্ন থাকে। রোনাল্ড রিড মারা যাওয়ার পর তিনি অনেকের ফিনান্সিয়াল রোল মডেল হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন তার সম্পত্তি লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল, এমনকি যারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন ব্যাপারটি তারাও জানতেন না।
১০) Save Money :
১৯৭০ সালে যখন পৃথিবীর সব তেল নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তখন বিশ্ব অর্থনীতিব্যবস্থায় চিন্তার ছাপ পরে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সব তেল শেষ হয়ে যায়নি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যার ফলে পূর্বের তুলনায় কম শক্তি খরচ হয় এমন সব অত্যাধুনিক গাড়ি এবং শিল্পকলকারখানা তৈরী হতে শুরু করলো। আমেরিকা ১৯৫০ সালে গড়ে যে শক্তি খরচ খরচ করতো তার থেকে ৬০% কম শক্তি খরচ করতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালের পর থেকে প্রতিটি গাড়ির এক মাইল চলতে পূর্বের তুলনায় অর্ধেক তেলের প্রয়োজন হয়। শক্তির পরিমান যেহেতু সীমিত তাই মজুত শক্তির কার্যকারিতা বাড়িয়ে শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে।
একই জিনিস টাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি যদি মনে করেন আপনার বর্তমান যা রোজগার তা করার জন্য যথেষ্ট নয় তাহলে হতাশায় ভুগবেন। কিন্তু যদি সংযম অভ্যাস করেন তাহলে অল্প বেতনেও সঞ্চয় সম্ভব। এটা সত্যি যে প্রাথমিক চাহিদাগুলো মেটানো জরুরী কিন্তু এগুলো পূরণ হলে মানুষ চাই কিছু আরামউপভোগের বস্তু। সেটাও যখন পূরণ হয়ে যায় তখন ইনকামের সাথে যুক্ত হয় অহংকার এবং তখনই লোকদেখানো ব্যাপারটা চলে আসে। কিন্ত লোকে আপনার ব্যাপারে কি ভাবলো না ভাবলো এবিষয়ে আপনি তোয়াক্কা না করেনা তাহলে লোকদেখানো জিনিস কম কিনবেন। কম কিনলে কম খরচ হবে। কম খরচ হলে বেশি সঞ্চয় হবে। অনেকে মনে করতে পারে যদি ভোগবিলাসই না করতে পারি তাহলে অর্থ সঞ্চয়ের কি মানে? সঞ্চয়ের কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকে না। জীবনটা অনিশ্চিত, সবকিছু আপনার হিসাবমত নাও চলতে পারে, তাই সঞ্চয় আপনাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য তৈরী রাখে। সঞ্চয় আপনাকে যে flexibility ও option দেয় তার থেকে মূল্যবান জিনিস কি হতে পারে!
বাকি দশটা অধ্যায়ে লেখক কি বলেছেন তা জানতে আগ্রহী হলে part II পড়ুন!
The Psychology Of Money বইটি আমার ভাল পুরানো বন্ধু জনাব আদিত্য সালভি আমাকে আর্থিক বিষয়ে বেপরোয়াতার কারণে প্রস্তাব করেছিলেন 😂 তবে এই বইটি আমাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে পড়ার জন্য আমার আগ্রহের কথা উল্লেখ করতে ভুলবেন না যে এটি আমি এ পর্যন্ত পড়েছি 11 তম বই এবং মে 2021 সালে এই বইটি পড়া শুরু করেছি। এই বইটি আমার মধ্যে নন-ফিকশন দর্শন সাহিত্যের জন্য তৃষ্ণা নিয়ে এসেছে।
বই সম্পর্কে:-
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এটি এমন একটি বই নয় যা আপনাকে আপনার আঙুলের মধ্যে ধনী হতে শেখাবে, তবে এটি এমন একটি বই যা আপনাকে আর্থিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দেবে এবং কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনাকে সঞ্চয়ের একটি ভাল পরিমাণ সঞ্চয় করতে সহায়তা করবে। সময় একটি ভাল সময়কাল
এই বইটি সামনের বছরগুলিতে নিশ্চিতভাবে ভাল চাহিদা থাকবে এবং ধনী বাবা গরীব বাবার মতো বইয়ের ক্ষেত্রে এটি সমান হবে৷
একটি খুব ভাল লিখিত এবং ভালভাবে ব্যাখ্যা করা বই এবং সেই সমস্ত লোকদের জন্য পড়তে হবে যারা বিশেষভাবে অর্থের ব্যাপারে অসতর্ক।