ব্যবসা বাণিজ্য ভারতীয় অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ব্যবসায় মুনাফা করার লক্ষ্য নিয়ে অনেকেই বিচার বিবেচনা না করে যেকোনো ব্যবসা শুরু করেন । কিন্তু উপযুক্ত পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করা কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। তাই ব্যবসা কত ধরনের হয় সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে কোন প্রকার ব্যবসা আপনার জন্য উপযুক্ত তা নির্ণয় করা সহজ হবে।

১। একক মালিকানা :

যখন কোনো ব্যবসা স্বতন্ত্র মালিকানাধীন হয় এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিচালিত হয় তখন সেটি হলো একক মালিকানা। অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসা একক মালিকানাধীন হয়। এখানে যেমন ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন ও নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই ব্যবসার মালিকের ওপর বর্তায়। লাভ বা ক্ষতির জন্য নিজেই দায়বদ্ধ থাকে।

২। পার্টনারশিপ (অংশীদারিত্ব):

পার্টনারশিপ হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে একটি ব্যবসা শুরু করা যেখানে প্রত্যেকেই ব্যবসার অংশীদার। এটি দুই ধরনের হয়। জেনারেল পার্টনারশিপ এবং লিমিটেড পার্টনারশিপ।

জেনারেল পার্টনারশিপ:

এই পরিকাঠামোয় অন্ততঃ পক্ষে দুইজন পার্টনারের প্রয়োজন হয়। তবে রাজ্যের কাছে নথিভুক্তির ঝামেলা নেই। তাদের একটি নিজস্ব চুক্তি থাকে। ব্যবসায় লাভ ও লোকসান দুটোই পার্টনার দের মধ্যে বিভাজিত হয়। তারা  নিজের নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা বিনিয়োগ করে এবং চুক্তি অনুযায়ী লাভ ক্ষতি বন্টিত হয়। তবে কোম্পানির ঋণ ও অন্যান্য যাবতীয় বিষয়ে উভয় সদস্য সমানভাবে দায়বদ্ধ থাকে।

লিমিটেড লয়াবিলিটি পার্টনারশিপ (LLP):

এখানে অংশীদাররা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও ঋণ এর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকে না। অর্থাৎ কোম্পানির ঋণের দায় বিনিয়োগকাীদের ওপর বর্তাবে না। এক্ষেত্রে একটি বৈধ চুক্তির প্রয়োজন। উভয় বিনিয়োগকারীকে রাজ্যের কাছে অংশীদারিত্বের একটি সংসাপত্র দাখিল করতে হয়। এখানে কোম্পানির ওপর ট্যাক্স চাপে ঠিকই কিন্তু সদস্যদেরকে তাদের লভ্যাংশের ওপর আলাদাভাবে কোনো কর দিতে হয় না।

এই ধরনের সংস্থা ভারতে শুরু হয় ২০১০ সালে এবং এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষেরও বেশি LLP কোম্পানি ভারতে রেজিস্টার্ড হয়েছে। কয়েকটি এইধরনের কোম্পানি হলো # Air Logistics LLP (transport, storage, communication)
 #Aroma Med Farm LLP ( agriculture & allied activities)
#Robotek LLP (Business Services)
#4 Dots Cards & Printers LLP (Manufacturing papers and printing related activities)

৩। কর্পোরেশন :

এটি হলো সবচেয়ে জটিল ও বৃহত্তর ব্যবসায়িক পরিকাঠামো যেখানে একাধিক বিনিয়োগকারী থাকে এবং প্রত্যেকেই ব্যবসার মালিকানা পায়। কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে কম পুঁজিতেও ব্যবসা করা যায়। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো কোম্পানির শেয়ার কিনে সময়মতো বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পারতে পারেন। তবে এখানে বিনিয়োগকারীর মুনাফার ওপর দুবার কর চাপে, একবার কর্পোরেট লেভেলে, একবার ব্যাক্তিগত লাভের ওপর।
কর্পোরেশনের সবথেকে বড় উদাহরণ হলো গুগল যেটি একটি আমেরিকান মাল্টিন্যাশনল কোম্পানি। এছাড়াও অ্যামাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, জেনারেল মোটরস ইত্যাদি হলো আমেরিকার বিখ্যাত কিছু কর্পোরেশন। ভারতের কয়েকটি বিখ্যাত কর্পোরেশন হলো রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা মোটরস, টাটা স্টিল, বাজাজ ফাইনান্স, এশিয়ান পাইন্টেস, অজন্তা ফার্মা, ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি।

 সুতরাং কত ধরনের ব্যবসা হয় তার একটি ধারণা আপনার নিশ্চয় হয়েছে। এখন নিজের সুবিধা অসুবিধা অনুযায়ী বিচার বিবেচনা করে আপনার জন্য সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবসা বাছাই করতে হবে। প্রত্যেক ধরনের ব্যবসায় কিছু ভালো দিক এবং কিছু খারাপ দিক আছে। তবে সব ব্যবসায় ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যে ব্যবসায় আপনি সাবলীল ভাবে কাজ করতে পারবেন এবং দীর্ঘদিন দিন টিকে থাকতে পারবেন সেটি খুঁজে বের করে উপযুক্ত পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে হবে।