PPF এর পুরো অর্থ হল পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public provident Fund), এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ প্রকল্প। ১৯৬৮ সালে ভারতীয় অর্থ মন্ত্রক প্রথম এই প্রকল্পটি চালু করে ভারতীয় নাগরিকদের সঞ্চয় করার প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। এটা প্রথম শুরু হয় যারা employers provident fund organization (EPFO) এর অন্তর্ভুক্ত নয় সেই সকল মানুষ দের জন্য।। পরবর্তীকালে তা সমস্ত সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এ বিনিয়োগকে সবথেকে সুরক্ষিত সঞ্চয় বলে মনে করা হয় কারণ মূলধনের উপর বর্তমানে ৭.৯% হারে সুদ পাওয়া যায় অথচ আয়কর আইনের অধীনস্থ ৮০ ধারা অনুসারে দেড় লাখ পর্যন্ত সঞ্চয়ের ওপর কর ছাড় পাওয়া যায়। বছরের পর বছর ভারতের সাধারণ নাগরিক তাদের বাচ্চার উচ্চশিক্ষা, বাচ্চার বিবাহ এবং নিজেদের অবসরের জন্য পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমায়।

পিপিএফ অ্যাকাউন্টের নিয়ম গুলি নিচে দেওয়া হল:

১) পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের হার:
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদের হার ভারতীয় অর্থ মন্ত্রক দ্বারা প্রতি তিনমাস অন্তর নির্দিষ্ট করা হয়। বর্তমানে এর সুদের হার ৭.৯%। যদিও প্রতিমাসে সুদের হিসাব করা হয় তবে প্রতিবছর ৩১ শে মার্চ এই অর্থ উপভোক্তার অ্যাকাউন্ট এ স্থানান্তরিত করা হয়।
২) লক ইন পিরিয়ড (Lock in period):
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চয় করা অর্থ ১৫ বছরের জন্যে লক-ইন থাকে। অর্থাৎ আপনি আপনার পুরো অর্থ ১৫ বছর পর তুলে নিতে পারবেন। তবে যদি আপনি আরো বেশী সময় ধরে এই ফান্ডে নিযুক্ত থাকতে চান তাহলে থাকতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনি ৫ বছর করে করে সময় বাড়াতে পারেন । প্রথম ১৫ বছরের lock -in পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর আপনি যতদিন খুশি টাকা সঞ্চয় করতে পারেন, আবার ইচ্ছে করলে সব টাকা তুলে নিতে পারেন।

৩) পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে কত টাকা জমা দিতে হয়?

বাৎসরিক সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এই ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। প্রতি মাসে বিনিয়োগ করতেই হবে তেমন কোন নিয়ম নেই। তবে বছরে একবার টাকা জমা দেওয়া আবশ্যক | এই ফান্ডে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়া যায়। তার বেশী জমা পড়লে তা গৃহীত হয় না। online, cash, Chaque বা demand draft – যেকোন উপায়েই টাকা জমা দেওয়া যায় ।

৪) অ্যাকাউন্ট খোলার শর্ত:

PPF account যুগ্মভাবে খোলা যায় না। একজনের নামে একটিমাত্র অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। তবে কোন ব্যক্তি কোন অপ্রাপ্তবয়স্কর নামেও আর একটি খাতা খুলতে পারে। সেক্ষেত্রে দুটি অ্যাকাউন্টের যুগ্ম বিনিয়োগ দেড় লাখের মধ্যে হতে হবে।

৫) নমিনেশন এর নিয়ম:

একজন ব্যক্তিকে বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি করা যায়। তবে একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি হিসেবে নির্বাচিত করতে হলে আপনি যতজনকে নমিনি করতে চান ততজনের প্রত্যেককে কত শতাংশ অংশীদার করতে চান তার উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার স্ত্রী এবং সন্তান দুজনকে নমিনি করেন এবং দুজনকে অর্থের সমান অংশীদার করতে চান তাহলে প্রত্যেকের নামের পাশে ৫০ শতাংশ অংশের উল্লেখ থাকবে। তবে কোন আপ্রাপ্তবয়স্কের নামে অ্যাকাউন্ট খুললে নমিনেশনের সুবিধা পাওয়া যায় না।

৬)ট্যাক্সে ছাড়ের সুবিধাঃ পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড Exempt Excempt Exempt (EEE) বিভাগের মধ্যে পড়ে যার অর্থ হল –

  • আপনি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবেন তা করমুক্ত।
  • আপনার নিয়োজিত অর্থের ওপর যে সুদ পারেন সেটা করমুক্ত।
  • Maturity এর সময় আপনি সুদসহ যে পরিমাণ টাকা পাবেন সেটাও করমুক্ত।
  • যেহেতু আয়কর আইনের ৮০c ধারা অনুযায়ী বাৎসরিক দেড় লাখ পর্যন্ত সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আপনি করে ছাড় পান এবং যেহেতু পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাৎসরিক দেড় লাখ পর্যন্তই জমানো যায় তাই এর পুরো টাকার ওপর কর এ ছাড় পাওয়া যায়। তাই tax বাঁচানোর ক্ষেত্রে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড একটি ভালো সঞ্চয় মাধ্যম।

৭) লোন পেতে সাহায্য করে:

পাবলিক প্রডিভেন্ট ফান্ডের একটি সুবিধা হল এই অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার ওপর ব্যক্তিগত লোন পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার দিন থেকে শুরু করে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ আর্থিক বছরের মধ্যে লোন পাওয়ার যোগ্যতা পাওয়া যায়। আপনার জমানো অর্থের ওপর নির্ভর করে আপনি কত টাকা লোন পাওয়ার যোগ্য। বাৎসরিক ২% হারে সুদের ওপর লোন পাওয়া যায়। মূল পরিমাণ টাকা তিন বছরের মধ্যে এ পরিশোধ করতে হবে। এরপর মাসিক কিস্তির মাধ্যমে সুদের টাকা মেটাতে হবে। যদি তিন বছরের মধ্যে মূল অর্থ পরিশোধ না হয় সেক্ষেত্রে 6% হারে বাৎসরিক সুদ লাগবে | পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর লোন নিলে তা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ফান্ডের টাকার ওপর কোনরকম সুদ পাওয়া যায় না।

৮) সুরক্ষিত সঞ্চয়:

কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান আপনার পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমানো অর্থের ওপর হাত লাগাতে পারে না যদি আপনি তাদের কাছে ঋণী থাকেন। আপনার বাড়ি বা সম্পত্তির ওপর হাত লাগাতে পারলেও আপনার পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড ঋণ মেটানোর জন্য দায়বদ্ধ নয়। সেক্ষেত্রে এটি একটি সুরক্ষিত সঞ্চয়।

৯) ম্যাচিউরিটির আগে টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিয়মঃ

  • ম্যাচিউরিটির আগে সম্পূর্ণ অর্থ তোলা যায় না। তবে অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর আংশিক পরিমাণ অর্থ তোলা যায়।
  • যদি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বা তার স্ত্রী বা পরিবারের অন্য কেউ কোন জীবনসংশয়ী রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে উপযুক্ত নথিপত্র( মেডিক্যাল কাগপত্রগুলো) জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা যায়।
  • যদি উচ্চশিক্ষার জন্য টাকার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত নথিপত্র যেমন ফি রিসিপ্ট, অ্যাডমিশান কনফারমেশন লেটার ইত্যাদী জমা দিয়ে অ্যাকাউন্টকে ম্যাচিউরিটির আগে বন্ধ করা যায়।
  • বাসস্থান পরিবর্তন করলে বা বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বন্ধ করা যায়।
  • ম্যাচিউরিটির আগে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বন্ধ করলে স্বাভাবিকের থেকে ১% কম হারে সুদ পাওয়া যায়।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য:


একজন ব্যক্তি কি 2টি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে?

না, একজন ব্যক্তির ২টি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে না। কিন্তু একটি পরিবার একাধিক PPF অ্যাকাউন্ট থাকার যোগ্য, পরিবারের একজন পিতা বা মাতা বা অভিভাবকের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে এবং তাদের মধ্যে একজন নাবালক সন্তানের জন্য (যদি তাদের থাকে) একটি PPF খুলতে পারে।

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কী কী নথির প্রয়োজন?

-পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্ম (ফর্ম A)
-মনোনয়ন পত্র
-পাসপোর্ট সাইজের ছবি
-প্যান কার্ডের কপি/ ফর্ম 60-61
-ব্যাঙ্কের কেওয়াইসি নিয়ম অনুযায়ী আইডি প্রমাণ এবং আবাসিক প্রমাণ

আমি কি একটি নিষ্ক্রিয় পিপিএফ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা চালিয়ে যেতে পারি?

হ্যাঁ. প্রতি বছর অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হওয়ার জন্য আপনি হোল্ডিং শাখাকে ৫০ টাকা জরিমানা প্রদান করে তা করতে পারেন। আপনাকে প্রতি বছর অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় থাকার জন্য ন্যূনতম 500 টাকা জমা করতে হবে সেইসাথে আপনি যে বছর অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করছেন তার জন্য ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে।

একজন প্রবীণ নাগরিক কি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন?

পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট উচ্চ বয়সসীমা নেই। যেকোনো ভারতীয় বাসিন্দা একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন।

১৫ বছরের শেষে আমার PPF অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা তোলা কি বাধ্যতামূলক?

না। মেয়াদপূর্তিতে অ্যাকাউন্টে থাকা সমস্ত তহবিল ভাঙ্গার প্রয়োজন নেই। যতক্ষণ বিনিয়োগকারী এটি পরিচালনা করতে চান ততক্ষণ অ্যাকাউন্টের মেয়াদ অব্যাহত বা বাড়ানো যেতে পারে। প্রতি এক্সটেনশনে অ্যাকাউন্টটি ৫ বছরের জন্য চালু রাখা যেতে পারে। এক্সটেনশনগুলি নতুন তহবিল জমা দিয়ে বা আর কোনও আমানত না করেই করা যেতে পারে।