ক্রিকেট খেলা ৪০০ বছরেরও বেশি আগের থেকে চলে আসছে এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবেখেলা হয় বিশ্বের ১০৪ টি দেশের ও বেশি জায়গায়। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এবং রেটিং দিন দিন কমে যাচ্ছে, কম মানুষ খেলাধুলা করছে।
সমস্যার অংশ, আপনি আর টিভিতে বিনামূল্যে ক্রিকেট পারছেন না কারণ ক্রিকেট এখন একটি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠেছে যা শুধু প্রাইভেট কোম্পানিকে ব্রোডকাস্টিং এর অধিকার দিচ্ছে বিশাল অর্থের বিনিময়ে।
আরেকটি সমস্যা হলো, মানুষের মনোযোগ অনেক কম হয়ে গেছে, টেস্ট নামে পরিচিত খেলা ম্যাচ পাঁচ দিন ধরে চলে, আর ক্রিকেটপ্রেমীরা এমন সেরকম ধৈর্যশীল নয় যেমন তারাআগে ছিল। তাছাড়াও আমরা জানি যে কাজের চাপ আগের তুলনায় এখন বেশি তাই মানুষের হাতে সময় অনেক কম সুতরাং সকলের অবসর সময় দিয়ে দীর্ঘ সময় চলাকালীন ম্যাচ দেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
কিন্তু একটা দেশ আছে যেখানে ক্রিকেট আগের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়, ভারত। ক্রিকেটের বিশ্বব্যাপী অনুরাগী দেড় মধ্যে শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ ৯০ শতাংশ ভক্ত।
ভারতে,প্রায় বারো বছর ধরে চলে আসা একটি ব্র্যান্ড নিউ গেমের বিন্যাস হয়েছে যা খেলার সময় ব্যাপকভাবে হ্রাস করে দিন থেকে ঘন্টা পর্যন্ত সময় কমিয়ে এনেছে, যার নাম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল।
কিন্তু এটি কিভাবে হয়ে ওঠে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং মূল্যবান ক্রিকেট লিগ?
আইপিএলের ব্র্যান্ড ভ্যালু গত পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে । ২০১৮ সালে লিগের ভ্যালু ছিল ৬.৩ বিলিয়ন ডলার। প্রতি বছর সম্প্রচারের (Broadcasting) অধিকার থেকে এটি ১৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করে এবং শুধুমাত্র ক্রিকেট লীগ যা বিশ্বের শীর্ষ ২০ বচেয়ে মূল্যবান মিডিয়া অধিকারের মধ্যে পড়ে , এনএফএল এনবিএ এবং এমএলবি এর পর ।
ভারতে ক্রিকেট একটি বিশাল খেলা বিশাল ফ্যান বেস সহ। সতেরো শতকের পর থেকে এটা ভারতীয় একটি প্রধান খেলাধুলা হয়ে উঠেছে । এটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাধুলা। আইপিএল অন্যতম বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া।
৪৮ দিনের বার্ষিক টুর্নামেন্ট তৈরি করা হয়েছিল ২০০৭ ভারতে ক্রিকেটের বোর্ডের সহায়তায় এবং তাতে অনুদান ছিল ভারতীয় ব্যবসায়ী ললিত মোদী।
যদিও ভরতে অনেক ক্রিকেট ট্রুনামেন্ট ছিল কিন্তু কমেরসিয়াল ভাবে লাভ জনক ছিলোনা তাই আইপিএল বিশেষভাবে মডেল করা হয়েছিল NFL এর মতো যার একটি বিকেন্দ্রীভূত লিগ আছে মানে সব দল মালিকানাধীন এবং স্বাধীনভাবে পরিচালিত।
যদিও ম্যাচ হয় সব ভারতে অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু প্রতিটি টিম নিয়ে আসে আন্তর্জাতিক প্রতিভা। ২০১৮ সালে, দলগুলি ৯৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল নিলামে ১৬৯ খেলোয়াড় কিনতে, ২০১৭ সালে যা ছিল ৪০ মিলিয়ন ডলার ৬৬ জন খেলোয়াড়ের জন্য।।
এই খেলোয়াড় দেড় কেনে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা একটি শহরের প্রতিনিধিত্ব করে, যাতে কিছু প্রধান উদ্যোক্তাদের পূর্ণ সমর্থন থাকে।
দর্শক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য খেলা গুলি রাখা হয় সন্ধে বেলা এবং সপ্তাহান্তে। এইভাবে বিশ্বের লিগ আইপিএল সবচেয়ে বড় ফ্যান বেস তৈরী করতে পেরেছে খেলাধুলার জন্য।
ভারতে ২০১৪ সাল থেকে আইপিএল একটি বিশাল অর্থ উপার্জনকারী এবং আইপিএল ব্র্যান্ডের মূল্যায়ন দ্বিগুণ হয়েছে (৬.৩ বিলিয়ন ডলার)।
2013 এর উদ্বোধনী সপ্তাহের সময় আইপিএল তে রেকর্ড ভেঙেছিল ৩৭১ মিলিয়ন দর্শক দেখার জন্য এবং দ্বারা সংযুক্তটুর্নামেন্টের শেষ সপ্তাহে মোট 769 মিলিয়ন দর্শক, এর জন্য বিজ্ঞাপনের আয় ছিল ২৭৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
কিভাবে আইপিএল আর্থিকভাবে কাজ করে?
২০০৮ সালে যখন আইপিএল চালু হয় লীগ সম্প্রচার অধিকার পাই সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ক্রীড়া বিপণন এজেন্সি ওয়ার্ল্ড স্পোর্ট গ্রুপ।
তারা একটি আইপিও ম্যাচ সম্প্রচার করে ভারতের সনি ম্যাকস টিভি চ্যানেল।১০ বছরের শর্ত অনুযায়ী প্রথম বছরে ওয়ার্ল্ড স্পোর্ট গ্রুপ আইপিএল প্রতি ম্যাচ প্রায় 1 মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে সম্প্রচারের অধিকার এর জন্য। যখন ২০১৭ সালে মেয়াদ শেষ হয়, সেই সম্প্রচারের সামগ্রিক মূল্য চুক্তি ছিল ৯১৮ মিলিয়ন ডলার।
এরপর শুরু হয় বৈশ্বিক বিডিং যুদ্ধ আইপিএলের একচেটিয়া অধিকারের জন্য। ফক্স এবং সনি প্রতিযোগিতামূলক বিড রেখেছিল, ফেসবুকও তার ২০১৮-২০২২ এর ডিজিটাল অধিকারের জন্য ৬০০ মিলিয়ন অফার করে ।
সেই টিভি এবং ডিজিটাল অধিকার শেষ পর্যন্ত আমেরিকান ফক্সের কাছে গেল ব্রডকাস্টাররা পাঁচ বছরের জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি আইপিএলের বৈশ্বিক মিডিয়া অধিকার এর জন্য। প্রতি ম্যাচ দাম লাফিয়ে উঠেছে ১ মিলিয়ন ডলার থেকে প্রায় ৮.৪৭ মিলিয়ন ডলার। তুলনামূলক NFL এ প্রতি খেলা খরচ হয় প্রায় ২২.৫ মিলিয়ন ডলার।
২০০৮ সাল থেকে আইপিও নামকরণের অধিকার তিনবার হাত বদল হয় , এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ড DLF থেকে Pepsico এবং অবশেষে Vevo.