ডি মার্ট হল একটি সুপার মার্কেট চেন যেখানে উপভোক্তারা বিভিন্ন ধরনের নিত্য ব্যবহার্য্য গৃহসামগ্রী এবং ব্যক্তিগত প্রাসাধনের জিনিসপত্র একই ছাদের তলায় পেয়ে থাকে। খাদ্য, প্রসাধন, পোষাক, রান্নার সরঞ্জাম, রান্নার গ্যাজেট, বিছানাপত্র, বাড়িতে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি যন্ত্রপাতি কি নেই একটি ডি-মার্ট স্টোরে? অথচ দ্রব্যের গুণগত মান বজায় রেখে অন্যান্য স্টোরের থেকে কম দামে উপভোক্তাকে জিনিস সরবরাহ করাই ডি-শার্টের প্রধান উদ্দেশ্য। এই আলোচনায় দেখব ডি মার্ট কম দামে জিনিস বিক্রি করেও কিভাবে একটি বড় অঙ্কের মুনাফা কামাতে সফল হয়েছে।
পুঁজিপতি রাধাকিশান দামানি ২০০২ সালে এই রিটেল ব্যবসাটি শুরু করেন। প্রধান প্রতিষ্ঠানটির নাম হল অ্যাডিনিউ সুপারমার্টস লিমিটেড যার অন্তর্গত হল ডি-মার্ট। মুম্বাই এর পাওয়াই শহরে প্রথম একটি স্টোর দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, অন্ধপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, ছত্রিশগড়, এন.সি.আর, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে মোট ২৬৩ টি ডিমার্ট স্টোর আছে। রাধাকিশান দামানি তার ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে নৈতিক মূল্যবোধের ওপর চরমভাবে বিশ্বাসী।
এই রিটেল কোম্পানী ভারতীয় ক্রেতার প্রয়োজনীয়তা এবং সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের প্রোডাক্ট নির্বাচন করে।
২০১৯ সালে ডিমার্ট এর মুনাফাতে আমূল বদল ঘটে এটি অ্যাভিনিউ সুপারমার্ট লিমিটেড হিসেবে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (NSE) IPO তালিকাভুক্ত হওয়ার পর | ২০১৭ সালে যেখানে এর মার্কেট ভ্যালু ৩৯, ৯৮৮ কোটি টাকা ছিল, সেখানে ২০১৯ সালে যা বেড়ে ১১৪,০০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছায়।
ডিমার্ট তার অন্যান্য প্রতিযোগীদের (যেমন, রিলায়েন্স রিটেল, জিও মার্ট, বিগবাজার) মত অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং এ বিশ্বাসী নয়। ডিমার্ট ধীর গতিতে তাদের ব্যবসাকে বৃদ্ধির দিকে বেশী মনোযোগী। নব্বই শতাংশ ডিমার্ট স্টোর নিজেদের জায়গা কিনে বানানো, তাই ল্যাংশের একটা বড় অংশ ভাড়া দেওয়ার জন্য নষ্ট হয় না। এই উদ্বৃত্ত মুনাফার টাকায় কাস্টমারদের বিভিন্ন ধরনের অফার এবং ডিল দেওয়া হয় যাতে ব্যবসার আরো বৃদ্ধি ঘটে।
ডিমার্ট এর ব্যবসা মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর কেন্দ্রীভূত – ১) কাষ্টমার ২) ভেন্ডর বা সেলার ৩) কর্মচারী।
১) সাধারণ কাস্টমারের কথা মাথায় রেখে ডিমার্ট তাদের স্টোরে সেইসব বেসিক জিনিসপত্রের ওপর ফোকাস রাখে যার চাহিদা জনসাধারণের মধ্যে সবচেয়ে বেশী। এক্ষেত্রে তারা ‘generalized’ নিয়ম মেনে চলে। এমনকি তাদের স্টোরগুলো বাহ্যিক ভাবেও ভীষণ সাদামাটা।
২) এবার আসি বিক্রেতা বা ডিলার প্রসঙ্গে। ডিমার্ট সবসময় তাদের ডিলারদের সঙ্গে সম্পর্কের বুনিয়াদ মজবুত রাখে। যেহেতু ডি মার্ট ডিলারের কাছ থেকে প্রোডাক্ট একসঙ্গে অনেক পরিমাণ কেনে এং নির্দিষ্ট সমসমত টাকা মিটিয়ে দেয় তাই এদের প্রোডাক্ট কস্ট অন্যান্য খুচরো বিক্রেতাদের থেকে অনেক কম পড়ে।
৩) ডি মার্টের তৃতীয় মজবুত দিক হল তাদের ওয়ার্ক ফোর্স। ডিমার্টের ওয়ার্ক কালচার তাদের কর্মচারীদের অনুকূলে কাজ করে। ফলে তাদের কর্মচারীরা অনেক বেশী দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের কাজে যুক্ত থাকতে পারে। এমনকি এরা স্কুল ড্রপ আউটদের নিয়োগ করে এবং নিজেদের প্রয়োজনমতো তাদেরকে গ্রুম করে নেয়। ডি মার্ট কর্মচারীদের ওপর সেল টার্গেট পূরণের অস্বাভাবিক চাপ রাখে না। এই নমনীয়তা এবং কাজের অনুকূল বাতাবরণ কর্মচারীদের উৎসাহ এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডি মার্ট ভারতে একটাই জনপ্রিয় যে একে অনেক সময় ভারতের Walmart বলা হয়ে থাকে।