করোনা প্যানডেমিক সময়ে “ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার ”  বাদে আমাদের দেশে যেটার নাম এগিয়ে এসেছে তা হলো “সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া” (SII) এটি বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক।  বিশ্বের দরবারে আজ এই (SII) কোম্পানির জন্যই আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল। কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন এর নাম আজ ঘরে ঘরে, গর্বের বিষয় যে এই ভ্যাকসিন উৎপাদিত হচ্ছে আমাদের দেশেরই কারখানাতে।

যে কোম্পানির জন্য আজ বিশ্বের দরবারে  আমাদের দেশের নাম এতো উজ্জ্বল, সেই SII এর খোঁজ করেছিলেন ড: সাইরাস পুনাওয়ালা।  তো আজকে জানবো, বিশ্বের সবথেকে বড় টিকা প্রস্তুতকারক এর ইতিহাস কি এবং এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডঃ সাইরাস পুনাওয়ালার  জীবনের কিছু অজানা কথা।

ড :সাইরাস পুনাওয়ালা বর্তমানে “সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া” (SII ) এর চেয়ারম্যান , যা বার্ষিক ১.৫ বিলিওন ডোজ তৈরী করতে স্বক্ষম।  তাঁর জন্ম ১৯৪১ সালে, বর্তমান বয়স ৮০ বছর, তিনি তার পড়াশুনা করেছেন পুনের বিশপস স্কুলে এবং স্নাতোকত্তর করেছেন বৃহান মহারাষ্ট্র কলেজ অফ কমার্স, ১৯৬৬ সালে। তারপর ১৯৮৮ সালে তিনি পি এইচ.ডি সম্মান পান পুনে ইউনিভার্সিটি থেকে “improved technology in the manufacture of specific anti -toxins and its socio -economic impact on the society ” এর জন্য।

তার স্ত্রী হলেন প্রয়াতঃ ভিল্লু পুনাওয়ালা , এবং পুত্র  আদার পুনাওয়ালা (যিনি বর্তমান SII  এর  CEO ) এসব গেলো তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কথা, এবার আসা যাক তার ব্যবসা জীবনের কথায়, যেখান থেকে আজ সারা বিশ্বে তিনি খ্যাত:-

তিনি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তা মূলত ঘোড়া দৌড় এর ব্যবসা করতো।  পরবর্তীকালে তিনি বুঝতে পারলেন যে এতে সেরকম বিশেষ কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না।  তাই তিনি শুরু করলেন গাড়ি তৈরী করার ব্যবসা তার স্কুলের এক বন্ধুর সাথে, কিন্তু কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি এই ব্যবসাও সমাপ্ত করলেন।

সেই সময়ে তার ঘোড়া ফার্ম এর ঘোড়া গুলোকে মুম্বাইয়ের এক সরকারি সংস্থা “হাফকিন্স ইনস্টিটিউট ” এ দিয়ে দিলেন , সেখানে ঘোড়ার সিরাম থেকে তৈরী হচ্ছিলো “টিকা”.এখান থেকেই তিনি বুদ্ধি পেলেন যে এই সুযোগকে  তিনিও কাজে লাগাতে পারেন , তারপরই  তিনি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠাতা করলেন “সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া” এর, সেখান থেকেই হাম, পোলিও এবং ফ্লু সহ বিভিন্ন ধরনের টিকা তৈরীর কাজ শুরু হল। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরী করার জন্য ৮০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে নতুন একটি কারখানা খুলেছে।

এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার পেছনে মি :পুনাওয়ালা  এর মূল কারণ ছিল কম মূল্যে তুলনামূলক ভালো টিকা তৈরী করা , এবং তা ভারত সহ সারা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া। আজ এই ইনস্টিটিউট ১৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কোম্পানি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মি : পুনাওয়ালা তার কর্ম জীবনে তার বিভিন্ন কাজের জন্য সম্মানিত হয়েছেন অনেক বড় বড় সম্মান এ।  তার কিছু হলো – 
১) ২০০৫ সালে তিনি ভারত সরকার এর তৃতীয় সবথেকে বড় সম্মান – পদ্মশ্রী পান
২) ২০০৭ সালে এর্নস্ট ও ইয়ং এর “এন্ট্রেপ্রেনিউর অফ দ্য ইয়ার “
৩) আবার ও ২০১৫ তে এর্নস্ট ও ইয়ং দ্বারা “এন্ট্রেপ্রেনিউর অফ দ্য ইয়ার ,২০১৪” সম্মান পান
৪) “ডিগ্রী অফ ডক্টরেট” পান , দ্য ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেট্স মেডিকেল স্কুল এর থেকে ২০১৮ সালে
৫) “অনারারি ডক্টরেটে অফ সায়েন্স” অ্যাওয়ার্ড পান ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড থেকে ২০১৯ সালে

এই ছিল ডঃ পুনাওয়ালা এর জীবনের কিছু ইতিহাস, এবং তার সাফল্যের কিছু কথা।