Wipro কোম্পানির নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। কিন্তু এর প্রতিষ্ঠাতা আজিম প্ৰেমজী সম্পর্কে খুব কোন মানুষই জানেন। ভারতীয় টেক ম্যাগনেট আজিম প্রেমজীর উইপ্রো লিমিটেড মার্কেট ক্যাপিটালের নিরিখে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম আইটি আউটসোর্সার। বর্তমানে উইপ্রো লিমিটেডের নেট সম্পত্তি ৩৩.৬ বিলিয়ন ডলার। এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পিছনে রয়েছে আজিম প্রেমজীর কাজের প্রতি আত্মৎসর্গ এবং বিচক্ষণতা।
জন্ম, পড়াশুনো এবং ব্যবসায় প্রবেশ:
আজিম প্রেমজী মুম্বাইয়ের একটি গুজরাতি মুসলিম পরিবারে ১৯৪৫ সালে ২৪শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার বর্তমান বয়স ৭৫ বছর। তাঁর পিতা মহম্মদ হাশিম প্রেমজী একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার ছোট্ট শহর আমলনারে তিনি ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ান ভেজিটেবিল প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালাতেন যেখানে মূলত ভেষজ তেল এবং কাপড় কাচার সাবান তৈরী হত। আজিম প্রেমজী স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জীনিয়ারিং করছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তাঁর পিতার মৃত্যুসংবাদ পান এবং পড়াশোনা ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে তার পিতার ব্যবসার হাল ধরেন। আজিম প্রেমজীর নেতৃত্বে কোম্পানি আরো অন্যান্য জিনিস উৎপাদন করতে শুরু করলো যেমন বেকারি ফ্যাট, টয়লেট সামগ্রী, বেবি প্রোডাক্টস, লাইটিং প্রোডাক্টস এবং হাইড্রোলিক সিলিন্ডার।
১৯৫১ সালে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন কর্পোরেশন(IBM) নামে একটি মাল্টিন্যাশনাল টেকনোলজি কোম্পানি জওহরলাল নেহেরুর আমন্ত্রণে ভারতে বাণিজ্য করতে আসে। কিন্তু ১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত সরকারের সিদ্ধান্তের জেরে IBM কে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়। IBM এর চলে যাওয়ার পর ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পে যে ফাঁক তৈরী হয় সেখানে বিচক্ষন প্রেমজী প্রভূত সম্ভবনা অনুভব করেন। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভবিষৎ সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে তিনি হাই টেকনোলজি সেক্টরে ঢুকে পড়েন।মার্কিন কোম্পানি সেন্টিনাল কম্পিউটার কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি মিনি কম্পিউটার তৈরী করতে শুরু করেন। এবং ১৯৮২ সালে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখেন উইপ্রো লিমিটেড ।
উইপ্রো লিমিটেড:
এটি হল গ্লোবাল আইটি এবং বিজনেস কন্সালটেন্সি সার্ভিসেস কোম্পানি যার বর্তমান হেডকোয়ার্টার বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত । ১৯৯৫ সালে বিদেশি ক্লায়েন্টদের জন্য তিনি Odyssey 21 নামে একটি ওভারসিজ ডিজাইন সেন্টার স্থাপন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি তাঁর নতুন প্রোডাক্ট উইপ্রো সুপারজিনিয়াস পার্সোনাল কম্পিউটার বাজারে আনেন। ২০০০ সালে কোম্পানি লঞ্চ করে উইপ্রো OSS smart এবং উইপ্রো WAP smart এবং এই বছরেই উইপ্রো নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০২ সালে উইপ্রো ভারতে প্রথম ISO 14001 সার্টিফাইড সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হয়।
উইপ্রো কনজিউমার কেয়ার এন্ড লাইটিং :
এটি পার্সোনাল কেয়ার, বেবি কেয়ার, হোম কেয়ার এবং ফার্নিচার ইত্যাদি পরিষেবা দিয়ে থাকে। এছাড়াও সিএফএল এবং এলইডি ইত্যাদি স্মার্ট লাইটিং প্রোডাক্টস তৈরী এবং দেশ বিদেশে সরবরাহ করে।
উইপ্রো ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং:
এটি হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের ব্যবসাটা দেখাশোনা করে। এটি ইন্টারন্যাশনাল লেভেলেও হাইড্রোলিক সিলিন্ডার সরবরাহ করে। এটি বিশ্বের একমাত্র স্বতন্ত্র হাইড্রোলিক সিলিন্ডার প্রস্তুতকারক সংস্থা বলে পরিচিত যা গোটা বিশ্ব জুড়ে ২০০০ মিলিয়ন সিলিন্ডার সরবরাহ করে। মহাকাশযান প্রতিষ্ঠান EADS এর সাথে এই সংস্থা পার্টনারশিপে আবদ্ধ আছে।
এবার আসি আজিম প্রেমজীর কিছু সমাজকল্যানকর কাজকর্মের কথায়, নতুবা তাঁর সম্পর্কে বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে কারণ তাঁর সাফল্যের থেকেও তাঁর উদারতার জন্য তিনি সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি মনে প্রাণে একজন মানবদরদী, তিনি বলেন ‘ধনী’ শব্দটা তাঁকে আনন্দ দেয় না, তিনি আনন্দ পান সমাজের কল্যানে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে। আগামী প্রজন্মকে আরো ভালো ভবিষ্যত উপহার দেওয়ার তিনি সম্প্রতি শিক্ষা ক্ষেত্রে ৭,৯০৪ কোটি টাকা দান করেন এবং Edelgive Hurun India philanthrophy ২০২০ তালিকায় মহানুভব ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়াও করোনা মোকাবিলার জন্য তিনি ১,১২৫ কোটি টাকা দান করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন।
আজিম প্রেমজী ফাউন্ডেশন:
এটি একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন যা তিনি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিনি এই সংস্থায় দুই মিলিয়ন মাকিন ডলার দান করেন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে। এরপর ২০১৯ এ তার উইপ্রো স্টকের ৩৪% শেয়ার এই সংস্থার কাজে দান করেন। ভারতের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আজিম প্রেমজী ইউনিভার্সিটি স্থাপন ছাড়াও বহু স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেন।
পুরস্কার:
১) ২০০০ সালে মনিপল একাডেমী অফ হাইআর এডুকেশন, ২০০৯ সালে wesleyan university এবং ২০১৫ সালে মাইসোর ইউনিভার্সিটি তাঁকে Honorary ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করে।
২) বাণিজ্যে অসাধারণ কাজকর্মের জন্য ২০০৫ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে।
৩) ২০১১ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ উপাধি লাভ করেন।
৪) ২০১৭ সালে ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিন তাঁকে পৃথিবীর পঞ্চাশজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে নবম স্থানে রাখে।
৫) ফরাসি সরকার তাঁকে ২০১৮ সালে সর্বশ্রেষ্ঠ অসামরিক উপাধি Chevalier de la Legion d’Honneur প্রদান করে।
৬) ২০১৯ সালে আমেরিকার Forbs ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের তিরিশজন জনহিতৈষী নেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
৭) আজিম প্রেমজী হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি ওয়ারেন বাফেট এবং বিল গেটস এর আহ্বানে The Giving Pledge সাক্ষর করেন। এই প্লেজ সারা বিশ্বে ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পিছিয়ে পড়া জনজাতির উন্নতিকল্পে দান করতে আহ্বান করে।
আজিম প্রেমজীর Giving Pledge দিয়ে শেষ করছি “I Strongly believe that those of us, who are privileged to have wealth should contribute significantly to try and create a better world for million who are far less privileged”- Ajim Premji
I really need money Azim Premji Sir can you help me?