ভারত থেকে নোবেল পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন ” অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় “। তিনি ২০১৯ সালে অর্থনীতি বিষয়ে নোবেল পান।
আজকে আমরা জানবো তার ব্যক্তিগত জীবন থেকে নোবেল পাওয়া পর্যন্ত জীবনের কিছু কথা –
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৯৬১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স ৬০ বছর। তার বাবা ছিলেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক, এবং মা ছিলেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিস ইন সোশ্যাল সাইন্স এ অর্থনীতির শিক্ষিকা।
তিনি তার বিদ্যালয়ের পড়াশুনো শেষ করেন কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে, তারপর কলেজ জীবন সম্পূর্ণ করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। সেখান থেকে তিনি ১৯৮১ সালে তার বি.এস.সি ডিগ্রী লাভ করেন এবং এর পর তিনি তার এম.এ. করেন দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি (J .N .U ) থেকে ১৯৮৩ সালে। তারপর ১৯৮৮ সালে তার পি.এইচ.ডি সম্পূর্ণ করেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। তার ডক্টরাল থিসিস এর বিষয় ছিল “তথ্য অর্থনীতির ওপর প্রবন্ধ “.
জে এন ইউ তে পড়া কালীন তিনি একবার তিহার জেলে আটক হয়েছিলেন তাদের ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতিপক্ষে আন্দোলন করার জন্য।
তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন অরুন্ধতী তুলি ব্যানার্জী , যার সাথে ২০১৪ তে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। বর্তমানে তার স্ত্রী হলেন এস্থের ডুফলো (ইনিও ২০১৯ সালে অভিজিত অর্থাৎ তার স্বামীর সাথেই অর্থনীতি তে নোবেল পেয়েছেন) । এখন তিনি ইউনাইটেড স্টেটস-এর নাগরিক অধিকার প্রাপ্ত। প্রথম স্ত্রীর তরফে একজন পুত্র সন্তান ছিল , যার দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালে মৃত্যু হয়। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে দুজন সন্তান আছে।
এসব গেলো তার ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা অবধি কিছু কিছু টুকরো তথ্য তার ব্যাপারে। এবার আসা যাক তার নোবেল পাওয়ার কথায় –
তিনি, তার সহধর্মিনী এস্থার ডুফলো , ও তাদের সহ রচয়িতা মাইকেল ক্রিমের ২০১৯ সালে একসাথে “নোবেল মেমোরিয়াল প্রাইজ ” পান তাদের গবেষণার জন্য “কিভাবে বিশ্বব্যাপী দারিদ্রের অপর কাজ করা যায় ” সেই বিষয়ে।
এছাড়াও তিনি ২০২০ তে ” ডক্টর অফ লেটারস ” পান কলিকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে।
তাছাড়াও তিনি –
১) ২০০৪ সালে “আমেরিকান একাডেমী আর্টস এনড সাইন্সেস ” এর “ফেলো” দের মধ্যে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২) ২০০৯ সালে “ইনফোসিস প্রাইজ ” পান অর্থনীতি তে।
৩ – ২০১৮ সালে “ইনফোসিস প্রাইজ ” এর প্রধান বিচারকের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন।
৪) ২০১২ সালে “জেরাল্ড লোব অ্যাওয়ার্ড ” পান তার স্ত্রী এস্থার ডুফলোর সাথে তাদের বই “poor economics ” এর জন্য।
৫) ২০১৩ সালে “রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ সভা ” এর “মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস ” প্যানেলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৬) ২০১৪ সালে “বার্নার্ড হার্মেস প্রাইজ ” পান , কিয়েল ইনস্টিটিউট অফ ওয়ার্ল্ড ইকোনমি থেকে।
৭) ২০১৯ সালে তিনি “এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাঙ্ক” এর ৩৪-তম বার্ষিক উৎসব এ বক্তৃতা দেন।
এর থেকেই সিদ্ধান্তে আসায় যায় তার সম্মানের তালিকাবঅনেকটাই বড় কারণ তার কাজের দূরদর্শিতাও যে অনেকটাই। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে কোনো দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে হলে, আগে দেশের নিচু স্তর থেকে কাজ করে , তার মাটি শক্ত করতে হবে তাহলেই কাঠামো আপনা আপনিই তৈরী হওয়ার যাবে শক্ত ভাবে।
তার লেখা কিছু বই হলো –
” Poor Economics: A Radical Rethinking of the Way to Fight Global Poverty “,
” Handbook of Field Experiments” ,
“History of Poverty Measurements”,
” Good Economics for Hard Times”.
বর্তমানে তিনি ” ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ” এর একজন অর্থনীতি র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও তিনি “হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি” ও “প্রিন্সটোন ইউনিভার্সিটি ” তে শিক্ষকতা করেছেন।
তিনি “আব্দুল লতিফ পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব ” এর একজন সহ -খোঁজি ,যেখানে “পভার্টি ইকোনমি ” এর ওপর কাজ করা হয়। কিভাবে কোনো দেশের নিচু স্তর থেকে ওপর স্তর অবধি অর্থনীতি কে সম -ভাগে বিভাজন করা যায় , তার ওপর কাজ করা হয়।
এই হলো ভারতীয় – মার্কিন একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এর কিছু কথা। আজ আমরা ভারতীয় হিসেবে খুব-ই গর্বিত। ১৯৯৮ সালে ভারতীয় অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার পর, প্রায় বিশ বছর পর দ্বিতীয় ভারতীয় অর্থনীতিবিদ যিনি নোবেল পেলেন তিনি হলেন অভিজিন বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।